Scientific Bangladesh

একদিন প্রকৌশলী/প্রযুক্তিবিদ বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসতে হবে এমনভাবে চলতে থাকলে – ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী

বিজ্ঞান শিক্ষা, বিজ্ঞান গবেষনার ভিজিবিলিটি, বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের নিস্ক্রিয়তাসহ নানা প্রশ্ন নিয়ে সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশ কথা বলছে নবীন প্রবীন বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক, শিক্ষকদের সাথে। আজ আমরা মুখোমুখি হয়েছি জনপ্রিয় বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক, বিজ্ঞান সংগঠক,শিক্ষক ড.ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর


সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ
আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে । এটা নিয়ে আমাদের কত টুকু উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

ড.ফারসীম মান্নানঃ এটা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। অবশ্য অনেকেই বলবেন, এটা এখন একটা গ্লোবাল ট্রেন্ড। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমরা তৃতীয় বিশ্বের মানুষ। অন্যদের যা বিলাস, আমাদের তা প্রয়োজন। এখন দেখা যায়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মৌলিক বিষয়গুলিতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা যেতে চাচ্ছে না। এটাতো ভাল লক্ষণ না, ভবিষ্যতে এইসব বিষয় আমাদের পড়াবে কে? বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর দরকার শুধু বিজ্ঞানের কাজে বা প্রযুক্তির চাকুরির জন্য নয়, দরকার সবক্ষেত্রেই। কারণ প্রযুক্তি আজ সর্বত্রগামী।


সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ
আমাদের দেশে প্রতি বছর কতজন বিজ্ঞান গ্রাজুয়েট দরকার, তার কি কোন হিসাব আছে আমাদের কাছে ? আমরা প্রয়োজনের চেয়ে কম না বেশী বিজ্ঞান গ্রাজুয়েট তৈরী করছি? বর্তমানে যে হারে বিজ্ঞান শিক্ষাথী কমছে , এই হারে কমতে থাকলে কবে নাগাদ আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে কম বিজ্ঞান গ্রাজুয়েট তৈরী হবে , ১০ ,২০ , ৩০ না ৫০ বছর পর? আপনি কিছু অনুমান করতে পারেন ?

ড.ফারসীম মান্নানঃ মনে রাখা দরকার, প্রযুক্তি আজ সর্বত্রগামী। কাজেই শুধু চাকরির হিসাবে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ঠিক করাটা আত্মঘাতী হবে। তাহলে এমন সময় আসবে, যখন আমাদের সেলফোন কোম্পানি বা ফ্যাক্টরিগুলোতে কাজ করার মত প্রকৌশলী/প্রযুক্তিবিদ বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসতে হবে।কিংবা ব্যাংকের টেলার-মেশিন চালাতেও চৈনিক বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হবে।

যে হারে কমছে বিজ্ঞানের ছাত্র, সেটা কবে নাগাদ ঘাটতি তৈরী করবে, সেটার জন্য স্টাডি দরকার। অনুমান করে বলা কঠিন।

সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ বলা হচ্ছে, স্কুল কলেজগুলিতে ভাল বিজ্ঞান ল্যাবরেটরী না থাকায় বিজ্ঞানের ছাত্র কমে যাচ্ছে। এটা কি ঠিক? আগে কি এখনকার চেয়ে ভাল বিজ্ঞান ল্যাবরেটরী ছিল স্কুল কলেজ গুলিতে?

ড.ফারসীম মান্নানঃ ঠিক এভাবে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, উন্নত ল্যাব-ফ্যাসিলিটি না থাকায় বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহ ও উৎসাহ কমে যাচ্ছে। বিজ্ঞান তো হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়, সেটাই যদি না থাকে, তবে বিজ্ঞানে ছেলেমেয়েরা কী দেখে /বুঝে আসবে? বইয়ের পৃষ্ঠায় তড়িৎ প্রবাহ পড়া আর লাইভ তারে কারেন্ট মাপার রোমাঞ্চই আলাদা!

সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ বলা হচ্ছে, নিবেদিত প্রাণ বিজ্ঞান শিক্ষক না থাকায় বিজ্ঞানের ছাত্র কমে যাচ্ছে । কলা ও বানিজ্য শাখা এত নিবেদিত প্রা্ণ শিক্ষক পাচ্ছে কিভাবে, বিজ্ঞান শাখা পাচ্ছে না কেন? বিজ্ঞানের শিক্ষকদের ত প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা উপার্জন করা সহজ, তাও কেন এমনটা হচ্ছে?


ড.ফারসীম মান্নানঃ
এর উত্তর আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় নিহিত। এখন আমাদের দরকার বেশ কিছু ‘ইন্সপায়ারিং শিক্ষক’ যাঁরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যার চর্চা বাড়াবে, উৎসাহ বাড়াবে। নিবেদিত প্রাণ শীক্ষক সব ক্ষেত্রেই কমে যাচ্ছে। শিক্ষকদের মূল্যায়ন এখন সমাজে ভিন্নভাবে হয়। আমাদের অনেকেরই জীবদ্দশায় বা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আমরা অনেক কিংবদন্তীর শিক্ষকের নাম শুনেছি। এমন কি এখন শোনা যায়? আমরা নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকদেরকে কি মনে রাখার কোনো ব্যবস্থা রেখেছি? তাহলে এ সময়ের একজন প্রতিশ্রুতিশীল চাকুরিপ্রার্থীর সামনে আমরা এমন কী উদাহরণ তুলে ধরতে পারি, যাতে সে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবে? প্রশ্নটি ভেবে দেখতে পারেন!

সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ সাধারন এবং কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা শেষে অনেকে এমবিএ পড়ছে । এদের কে কেন আমার বিজ্ঞানে ধরে রাখতে পারছি না? এটা কত টুকু উদ্বেগের বিষয়?

ড.ফারসীম মান্নানঃ আমার মনে হয় না সেটা সমস্যা।

সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ দেশের বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি বিজ্ঞান গবেষনাগারে যোগ দিচ্ছে ? কিন্তু তাদের মেধা কে কাজে লাগাতে পারছে না। ফলে হতাশ হয়ে এক সময় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে অথবা দেশে প্রশাসন বা বেসরকারী খাতের অন্য চাকরীতে চলে যাচ্ছে । এটা আমাদের জন্য কতটুকু আশঙ্কার কারণ?

ড.ফারসীম মান্নানঃ আশংকার তো বটেই। ভাল কর্মী বাহিনী না থাকলে ভাল ল্যাবরেটরি চালাবে কে? টাকা-পয়সা/সুবিধ না দিলে কে আর বিদেশ ছেড়ে দেশে এসে মাটি কামড়ে বিজ্ঞান প্রচার করতে চাইবেন?


সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ
আমাদের সরকারী বিজ্ঞান গবেষনাগার গুলির অবদান সাধারন মানুষের কাছে ভিজিবল না। তাই অনেক কেই বলতে শোনা যায়, এসব গবেষনাগারের পিছনে টাকা খরচ না করে এগুলি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এই নিয়া সরকারের কি করনীয়, গবেষনাগার গুলির ই বা কি করনীয় বলে আপনি মনে করেন ?


ড.ফারসীম মান্নানঃ
সরকার এদের অর্জনগুলোকে ভিজিবল করতে পারে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে উদ্যোগ নিয়ে প্রচারণা চালাতে পারে। তাছাড়া নভোথিয়েটার বা বিজ্ঞান জাদুঘরকেও গতিশীল করতে পারে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।

সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ আমাদের সরকার বিজ্ঞান গবেষনা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন কে কি যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে ? আপনার কি মনে হয়?

ড.ফারসীম মান্নানঃ নাহ


সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ
মা নিজে থেকে দুধ না দিলে সন্তানের দায়িত্ব কান্না কাটি করা ।
সরকার যথাযথ গুরুত্ব না দিলে বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের উচিত এই নিয়া আওয়াজ তোলা । আমাদের বিজ্ঞানী সম্প্রদায় কি সেই কাজটি করছেন ?

ড.ফারসীম মান্নানঃ মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।


সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ
বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের পক্ষে কথা বলার জন্য দেশের বিজ্ঞানীদের কোন সংগঠনটির দায়িত্ব সবচেয়ে বেশী বলে আপনি মনে করেন ? তারা কি তা করছেন বলে মনে করেন ?

ড.ফারসীম মান্নানঃ বাংলাদেশ একাডেমী অব সায়েন্সেজ। বাকী প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবার জানা।

সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ আপনার সময় ও মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

ড.ফারসীম মান্নানঃ সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ প্রশ্নগুলিকে সামনে আনার জন্য এবং আমাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top