সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশ এবার কথা বলেছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ রমিত আজাদ স্যারের সাথে।স্যারের অভিজ্ঞতা আর মতামত থেকে নবীন গবেষকরা উপকৃত হবেন বলে আমরা আশাবাদী। সায়েন্টিফিক বাংলাদেশের পক্ষে স্যারের সাথে কথা বলেছেন ডঃ মুনির উদ্দিন আহমেদ।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ আমাদের পাঠকদের উদ্দেশ্যে আপনার শিক্ষা ও গবেষণা জীবন নিয়ে কিছু বলুন।
ডঃ আজাদঃ– আমি ১৯৮৮ সালে সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. পাশ করে আমার স্কুল শিক্ষা জীবন শেষ করি। তারপর আমি একটি স্কলারশীপ পেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্যে তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে পারি জমাই। সেখানে আমি তিবিলিসি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেক রুশ ভাষা শিক্ষা কোর্স সমাপ্ত করি। তারপর আমি ১৯৯৬ সালে ইউক্রেন-এর ‘খারকোভ স্টেট ইউনিভার্সিটি’-র থিওরেটিকাল ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে ম্যাথমেটিক্স ও ফিজিক্স-এর উপর মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করি। এরপর আমি আরো একটি স্কলারশিপ পেয়ে পি.এইচ.ডি. পর্যায়ে গবেষণা শুরু করি। ২০০১ সালে আমি মস্কোর গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রী অর্জন করি। তারপর আরো একটি স্কলারশিপ পেয়ে ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক্টরাল পর্যায়ে গবেষণা করি।
আমার শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় মস্কোর গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, সেখানে আমি কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও থার্মোডাইনামিক্স সাবজেক্ট দুইটি পড়িয়েছি। তারপর আমি ঢাকার ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেছি। ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজি’-তেও এ্যাডজাংকট টিচার হিসাবে শিক্ষকতা করেছি। বর্তমানে আমি ঢাকার ‘আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ’-এ সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে শিক্ষকতা করছি। আমি এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উনিশটি বিষয় পড়িয়েছি।
আমার ১৪টি আন্তর্জাতিক জার্নাল গবেষণাপত্র, ১৭টি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় কনফারেন্স গবেষণাপত্র, একটি বুক-চাপ্টার, ফিজিক্সের উপর দুইটি মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ, একটি টার্মিনলজি ডিকশনারী প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া আমার গবেষণা জীবনের বাইরেও সাহিত্য, কবিতা ইত্যাদি বিষয়ে ছয়টি ই-বুক প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া আমি ইতিহাস, দর্শন ও অন্যান্য বিষয়েও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করে থাকি।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ কি কারনে শিক্ষকতা এবং গবেষণায় আসলেন?
ডঃ আজাদঃ– আমি মনে করি যে গবেষণা করা একজন অধ্যাপক হিসাবে আমার দায়িত্ব। যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রধান কাজ আছে, এক. জ্ঞান দান করা, দুই. জ্ঞান তৈরী করা। গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান তৈরী করা যায়।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ গবেষণা বরাদ্দের জোগাড় হয় কি করে?
ডঃ আজাদঃ– আমার গবেষণাগুলো মূলত তাত্ত্বিক, তাই গবেষণার জন্য আমার তেমন কোন ফান্ড-এর প্রয়োজন পড়েনা।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ গবেষণা বরাদ্দের বেশীর ভাগটা কোথা থেকে আসে? দেশ না বিদেশ থেকে?
ডঃ আজাদঃ– আমি ইতিমধ্যেই বলেছি যে, যেহেতু আমার গবেষণাগুলো মূলত তাত্ত্বিক, তাই গবেষণার জন্য আমার তেমন কোন ফান্ড-এর প্রয়োজন পড়েনা।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ অপ্রতুল অর্থ বরাদ্দ বাংলাদেশে গবেষণায় একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। বৈশ্বিক অবস্থার বিচারে এই ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
ডঃ আজাদঃ– আমি বাংলাদেশকে নিয়েই মূলত: বলতে চাচ্ছি। কারণ আমি জরীপ করে দেখেছি যে, বাংলাদেশে এই সমস্যটা বেশী। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে তো অবশ্যই, উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই গবেষণার জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্ধ দিয়ে থাকে। আসলে এটা উন্নয়নের একটা বড় শর্ত। যে জাতি গবেষণা করে নতুন জ্ঞান তৈরী করতে পারেনা, তারা বাধ্য হয় অন্য জাতির উপর নির্ভর করতে। এই কারণে বাংলাদেশের জনগণকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে ও গবেষণাখাতে পর্যাপ্ত পরিমানে অর্থ বরাদ্ধ দিতে হবে।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ আপনার গবেষণার ক্ষেত্রগুলো কি কি? দেশে গবেষণার জন্য কি ধরণের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছেন?
ডঃ আজাদঃ- আমি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করে থাকি। যেহেতু আমি ফিজিসিস্ট ও গণিতবিদ তাই আমি ফিজিক্স ও গণিতে গবেষণা বেশী করে থাকি তবে তার পাশাপাশি ব্যবসা প্রশাসন, নিউক্লিয়ার মেডিসিন ও ফিলোসফি অব সায়েন্স-এর উপর সামান্য গবেষণা করে থাকি।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ আপনার তত্ত্বাবধানে কতজন গবেষণা করেছে? গবেষণা ছাত্রদের মধ্যে আপনি কোন কোন গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে চান?
ডঃ আজাদঃ– দুইজন পিএইচডি গবেষককে কো সুপারভাইজার হিসেবে সাহায্য করেছি ও ২০ জনের অধিক মাস্টার্স পর্যায়ের গবেষককে সাহায্য করেছি।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ যদি সরকার বাংলদেশে বিজ্ঞান গবেষণার উৎকর্ষতার জন্য আপনার কাছে পরামর্শ চায় তাহলে আপনার প্রধান তিনটি পরামর্শ কি হবে?
ডঃ আজাদঃ– ১। অধ্যাপক ও গবেষকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে, ২। গবেষণাখাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধি করতে হবে, ৩। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গবেষণার উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ তরুণ ছাত্র যারা গবেষণায় আসতে চায়, বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানে, তাদের জন্য আপানার পরামর্শ কি?
ডঃ আজাদঃ– আমি তাদের এই বলতে চাই যে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের চূড়ান্ত লক্ষ্যই হওয়া উচিৎ ভালো গবেষক হওয়া। তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তাদের লক্ষ্য স্থির করে গবেষণায় মনোনিবেশ করতে হবে। আর যারা ফিজিক্সে গবেষণা করতে আগ্রহী, তাদেরকে বলবো যে, যেহেতু সাবজেক্ট-টি জটিল তাই এখানে মেধা ও পরিশ্রম দুই-ই বেশী প্রয়োজন; এ্যাকর্ডিংলি মাইন্ড সেটআপ-টাও সেরকম থাকতে হবে।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ বাংলাদেশে বিজ্ঞানীদের যে সব পেশাগত সংগঠন আছে সেগুলো কি তাদের ভূমিকা যথাযথ ভাবে পালন করছে? এই সংগঠনগুলোর ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি?
ডঃ আজাদঃ– বাংলাদেশে নানাবিধ সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে তারা যতটুকু করছে, তা এ্যাপ্রিশিয়েট করি। তবে নিঃসন্দেহে তাদের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করাও প্রয়োজন।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ আমরা উল্লেখ করিনি, এমন কোন পয়েন্টে পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?
ডঃ আজাদঃ- আমি ব্যবসা প্রশাসনের ছাত্রছাত্রীদের যখন রিসার্চ মেথডলজি পড়াই তখন তাদেরকে বলি, “এ গুড বিজনেস স্টার্টস উইথ এ গুড রিসার্চ। রিসার্চ না করে কোন ব্যবসা শুরু করা এক ধরণের বোকামী। একইভাবে ব্যবসার সাফল্য ধরে রাখতে চাইলেও কন্টিনিউয়াসলি গবেষণা করে যেতে হবে। তাই গবেষণা ছাড়া কোন গতি নাই।” একই কথা অন্য সবার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেকোন ফিল্ডেই গবেষণা দিয়ে শুরু করতে হয় ও তারপর অবিরাম গবেষণার মধ্য দিয়েই তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। তাই গবেষণার কোন বিকল্প নাই।
সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ আপনার সময়ের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ডঃ আজাদঃ– আপনাকেও অজস্র ধন্যবাদ।