আমেরিকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নামে পাবলিক কিন্তু কাজে প্রাইভেট । বর্তমান সময়ে সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে খুব অল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে থাকে অথচ একটা সময় ছিল যখন পাবলিকে প্রচুর টাকা দিত । সরকার টাকা না দেয়ায় ধীরে ধীরে সেই খরচ বেড়ে এখন বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার খরচের দিক দিয়ে তাদের অবস্থান উপরের দিকে । ইউনিভার্সিটি অফ কেণ্টাকির ‘১৯-‘২০ অর্থবছরের ৩৭৯৭৪ কোটি টাকার (মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সহ) বাজেটে সরকার দিয়েছিল মাত্র ৪১০ কোটি টাকা, যা একই অর্থ বছরের ঢাবিতে দেয়া সরকারের বরাদ্দ ৬৯৪ কোটি টাকার চেয়েও কম । ছাত্র-ছাত্রী এবং অন্যান্য উৎস (মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ৫৮%) থেকে বিভিন্ন উপায়ে ইউনিভার্সিটি অফ কেণ্টাকি বাকীটা আয় করেছে । ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষার এই খরচ মেটাতে সরকার বা বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নেয় । ব্যাচেলর ডিগ্রী শেষে একজন ছাত্রের গড় ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৫ লাখ টাকা । পড়াশুনা শেষে চাকুরি করে এই ঋণ দিতে দিতে এদের জীবন শেষ । আমেরিকার কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল কিন্তু গ্রেড-১২ পর্যন্ত প্রত্যেকটা শিশুর পাবলিক স্কুলে বিনামূল্যে পড়ার ব্যাবস্থা আছে । এইটা তাদের শিক্ষা পলিসি । অনেক পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে । আমেরিকার শিক্ষা মডেলের কপি কিংবা এডিটিং কোনটাই আমরা করতে পারব না । তাহলে আমরা কী করব ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘১৯-‘২০ অর্থবছরে মোট বাজেট ছিল ৮১০ কোটি, যেইখানে তাদের নিজস্ব আয় মাত্র ৭০ কোটি টাকা । বলা যায় নিজের পকেট থেকে সরাসরি কোন রকম খরচ ছাড়াই আমরা একটা ডিগ্রী পেয়ে যাই । ডিগ্রী শেষে কারও মাথায় এক টাকা ঋণ আছে কিনা সন্দেহ ! থাকলেও সেই সংখ্যাটা নগণ্য । সরকার এই সুবিধা না দিলে আমার মত হাজার হাজার ছেলেমেয়েদের প্রতিবছর গ্রেড-১২ শেষে পড়ালেখার যবনিকা টানতে হত । রাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন সমাজে, শ্রেণিতে শিক্ষার ব্যাপক আকারে বৈষম্য দেখা দিত, যা এখনও আছে, বিশেষ করে গ্রামে, এবং ভৌগোলিক কারণে অনেক এলাকায় এই বৈষম্য প্রকট । সরকার প্রচুর টাকা খরচ করে আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তৈরি করে এবং বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে । আমাদের মত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিনা খরচে উচ্চশিক্ষা একটা আশির্বাদ ।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিনা খরচে উচ্চশিক্ষা এবং আরও নানাবিধ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি প্রত্যাশা অনুযায়ী অগ্রসর হতে পারছে না । আমার ধারণা সরকার যদি ফান্ডিং কমিয়ে নিজস্ব আয়ে চলতে বলে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আরও দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে । যেমন, ইন্ডিয়ার আইআইটিগুলি ছাত্রছাত্রীদের থেকে টিউশন ও হোস্টেল ফি বাবদ একটা ভাল পরিমাণ টাকা নিয়ে থাকে, যদিও তারা পারিবারিক আয়ের উপর ভিত্তি করে ছেলেমেয়েদের স্কলারশিপ দিয়ে থাকে । আমাদের সমস্যাটা এইখানেই !! বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও একটাকা বাড়ালে আমরা ছাত্রজীবনে হইচই শুরু করে দিতাম । এখন যারা অধ্যয়নরত তারাও করবে । আমাদের এই হইচই দমিয়ে কখন এবং কীভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেরা আয় বাড়াতে শুরু করবে তার একটা পদ্ধতি নীতিনির্ধারকদের খুঁজে বের করতে হবে ? শীঘ্রই আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে অফিসিয়াল স্বীকৃতি পাব । কে জানে, হয়ত সেই সময় থেকেই কিংবা আরও ১০-১৫ বছর পর সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্ব আয় বাড়াতে চাপ দিতে থাকবে ? তার আগ পর্যন্ত আমাদের এইভাবেই চলতে হবে ।
সূত্রঃ