Scientific Bangladesh

বিশ্বে একজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী কার্বন নিঃসরণ করে তিনজন আমেরিকান

মু: মাহবুবুর রহমান

সমগ্র বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রধান দুটি উপাদান হল কয়লা আর ডিজেল। বিজ্ঞানীদের মতে কয়লা থেকে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয় এবং কার্বন নিঃসরণে দায়ী দ্বিতীয় উপাদান হলো ডিজেল বা তেল। আর জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হলো কার্বন ডাই অক্সাইড কিংবা সংক্ষেপে বললে কার্বন।

বিশ্বের ধনী দেশ কিংবা ধনী মানুষগুলোর বিলাসিতাই কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। জাতিসংঘের এপ্রিলে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের ধনী ১ শতাংশ মানুষ বিশ্বের দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের তুলনায় দ্বিগুণ কার্বন নিঃসরণ করে। ঐ গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ধনী ৫ শতাংশ মানুষ ৩৭ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করেছে।

আর সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তিন জন আমেরিকান তাদের দৈনন্দিন বিলাসিতায় যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন করে তা প্রতিদিন একজন মানুষ হত্যা করতে পারে এমন পরিমাণ উষ্ণতা সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে ২৯ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঐ গবেষণার ফলাফল নিয়ে আলোচনায় বলা হয়েছে, গড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন নাগরিক তাদের দৈনন্দিন জীবনধারা অনুযায়ী যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখেন, তা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়িয়ে একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়া দেশটির একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ ঘটে, তার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ৯ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

কার্বন নিঃসরণের প্রাণহানিজনিত ক্ষতি বিশ্লেষণমূলক এটাই প্রথম গবেষণা বলে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই গবেষণা বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেশে দেশে মানুষ তার জীবনাচরণে কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখে, সেটা তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ কার্বন নিঃসরণের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনে সম্ভাব্য মৃত্যুর সংখ্যার হিসাব তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই গবেষণায়। ‘কার্বনের সামাজিক ব্যয়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গড়ে ৩ দশমিক ৫ জন মার্কিন তাঁর জীবদ্দশায় যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখেন, সেই পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করেন ২৫ জন ব্রাজিলিয়ান বা ১৪৬ জন নাইজেরিয়ান।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে স্বাভাবিক কার্বন নির্গমন হারের বাইরে বায়ুমণ্ডলে চার হাজার ৪৩৪ টন অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড প্রবেশ করেছে। এতে বলা হয়, যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে, তার কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বিশ্বব্যাপী একজন ব্যক্তির অকালমৃত্যু হতে পারে। এই বাড়তি কার্বন ডাই অক্সাইড বর্তমানে ৩ দশমিক ৫ জন আমেরিকানের গড় নিঃসরণের সমতুল্য।

গবেষণায় আরো দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গত বছরের তুলনায় ৪০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি কার্বন নিঃসরণ করেছে। এর ফলে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ ৯০৪ জন মানুষ মারা যেতে পারে বলে ধারণা করছেন গবেষকেরা। তবে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার কমাতে পারলে চলতি শতাব্দীর শেষ দিকে বিশ্বের প্রায় ৭ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব।

গবেষণাপত্রের লেখক কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের ডেনিয়েল ব্রেসলার বলেন, ‘‘এখন যে জলবায়ু নীতিমালা রয়েছে, সেটা আরও কঠোর করলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জীবন বাঁচানো সম্ভব। আমি অবাক হয়েছি, এত বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে! এই মৃত্যুসংখ্যা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে, তবে জলবায়ুজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যাটা কম হতে পারে, আবার অনেক বেশিও হতে পারে।’’

ব্রেসলার উল্লেখ করেন তাঁর গবেষণাপত্রটি ব্যাক্তিগত কার্বন নিঃসরণের প্রভাব সম্পর্কিত, তবে তিনি মনে করেন যেসব নীতির কারণে কার্বন নিঃসরণ কমানো যাচ্ছে না সেদিকে সবার নজর দেয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘‘কারোরই নিজের কারণে অন্যকেউ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সেটা ব্যক্তিগতভাবে নেয়া উচিত নয়, কারণ কার্বন নিঃসরণ মূলত: আমাদের বসবাস সংস্কৃতি ও আধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল।’’

মু: মাহবুবুর রহমান; নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top