Scientific Bangladesh

বাংলাদেশ একাডেমী অব সাইন্সেস সংঘটনটি সেইভাবে কার্যকর বলে মনে করেন না – ড. সাইফুল ইসলাম

বিজ্ঞান শিক্ষা, বিজ্ঞান গবেষনার ভিজিবিলিটি, বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের নিস্ক্রিয়তাসহ নানা প্রশ্ন নিয়ে সাইয়েন্টিফিক বাংলাদেশ কথা বলছে নবীন প্রবীন বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক, শিক্ষকদের সাথে। আজ আমরা মুখোমুখি হয়েছি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিঊট অব ইনফরমেশন টেকনলজির তরুণ সহকারী অধ্যাপ্পক, মোঃ সাইফুল ইসলামের সাথে

সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ: আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের কত টুকু উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

ড. সাইফুল ইসলামঃ আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে এটা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হবার মত একটি বিষয়| যে কোনও দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে তার আবিষ্কার করার সামর্থ্যের উপর । কিন্তু দিনকে দিন আমরা একটি ভোগ নির্ভর জাতিতে পরিণত হচ্ছি| আমাদের তরুণ প্রজন্ম বিজ্ঞান শিক্ষার উপর গুরুত্ব না দিয়ে BBA- MBA ডিগ্রী নেয়াকে ভালো মনে করছে| কারণ বিজ্ঞান শিক্ষা নির্ভর চাকুরী খুব যুতসই নয় আজকাল তাদের কাছে| আমাদের নীতি-নির্ধারকগণও এ বিষয়টাতে কোনও সুনজর দিচ্ছে না। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ: আমাদের দেশে প্রতি বছর কতজন বিজ্ঞান গ্রাজুয়েট দরকার, তার কি কোন হিসাব আছে আমাদের কাছে ? আমরা প্রয়োজনের চেয়ে কম না বেশী বিজ্ঞান গ্রাজুয়েট তৈরি করছি? বর্তমানে যে হারে বিজ্ঞান শিক্ষার্থী কমছে , এই হারে কমতে থাকলে কবে নাগাদ আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে কম বিজ্ঞান গ্রাজুয়েট তৈরি হবে, ১০,২০,৩০ না ৫০ বছর পর? আপনি কিছু অনুমান করতে পারেন ?

ড. সাইফুল ইসলামঃ আমার জানামতে সরকারী ভাবে এইসব তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না কিংবা কতজন graduate দরকার তার কোনও হিসাব পর্যালোচনা করা হয় না| প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর অভিভাবক ও সুশীল সমাজের মাঝে শুধুমাত্র একধরনের উদ্বিগ্নতা লক্ষ করা যায় পাশ করা ছাত্রদের ভর্তি নিয়ে|কিন্তু এসব ছাত্র কোন বিষয় এ graduate হলে জাতি হিসাবে আমরা লাভবান হব তা আমরা ভেবে দেখি না| সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন নতুন শিক্ষা কমিশন ঘটিত হলেও তার বাস্তবায়ন সেভাবে হয় না|

সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ: বলা হচ্ছে, স্কুল কলেজগুলিতে ভাল বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি না থাকায় বিজ্ঞানের ছাত্র কমে যাচ্ছে । এটা কি ঠিক? আগে কি এখনকার চেয়ে ভাল বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি ছিল স্কুল কলেজ গুলিতে?

ড. সাইফুল ইসলামঃ ভালো বিজ্ঞান laboratory ভালো শিক্ষার জন্য দরকার এ বিষয়টিতে দ্বিমত নেই| একটি ভালো laboratory ছাত্রদের মধ্যে বিজ্ঞানকে জানার আগ্রহ তৈরি করে । আগে ভালো বিজ্ঞান laboratory ছিল এখন নেই এ বেপারে আমি একমত না। এখন আগের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা ভালো হবার কথা।

সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ: বলা হচ্ছে, নিবেদিত প্রাণ বিজ্ঞান শিক্ষক না থাকায় বিজ্ঞানের ছাত্র কমে যাচ্ছে । কলা ও বাণিজ্য শাখা এত নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক পাচ্ছে কিভাবে, বিজ্ঞান শাখা পাচ্ছে না কেন? বিজ্ঞানের শিক্ষকদের ত প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা উপার্জন করা সহজ, তাও কেন এমনটা হচ্ছে?

ড. সাইফুল ইসলামঃ নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক এখনো অনেক আছে, সবসময় থাকবে| শিক্ষকের প্রাণ থাকলে ¬তাকে নিবেদিত প্রাণ বানানো যায়, অন্যথায় নয়| আজকালকার শিক্ষকরা প্রাণ টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে| আমাদের জানা দরকার যে শিক্ষকতা অন্য অনেক পেশার মত একটি পেশা| এই পেশায় আজকাল ভালো ফলাফল ধারী শিক্ষক আসতে চায় না এই পেশা লোভাতুর না বলে| বড় সিটির বাইরে তো আশাই করা যায় না| শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে ভালো ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক বানানোর পরিকল্পনা করা দরকার বলে আমি মনে করি|সেইসাথে দলীয় পরিচয় ও আত্মীয় পরিচয় ভুলে মেধাবীদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিতে হবে|

সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ: সাধারণ এবং কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা শেষে অনেকে এমবিএ পড়ছে । এদের কে কেন আমার বিজ্ঞানে ধরে রাখতে পারছি না? এটা কত টুকু উদ্বেগের বিষয়?

ড. সাইফুল ইসলামঃ সাধারণ ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেকে বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে পড়াশুনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে এমবিএ করে অন্য ফিল্ড এ চলে যাচ্ছে| বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে পাশ করে একই বিষয়ের উপর কাজ করার সুযোগ কম বলে এমন ঘটছে|অনেক সময় চাকরির দরকারে অনেকে এমবিএ করছে|এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়| বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক থেকে জাতি হিসাবে এমনিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি| বিজ্ঞানবিমুখিতা এটাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে|

সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ: দেশের বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি বিজ্ঞান গবেষণাগারে যোগ দিচ্ছে ? কিন্তু তাদের মেধা কে কাজে লাগাতে পারছে না। ফলে হতাশ হয়ে এক সময় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে অথবা দেশে প্রশাসন বা বেসরকারি খাতের অন্য চাকরীতে চলে যাচ্ছে । এটা আমাদের জন্য কতটুকু আশঙ্কার কারণ?

ড. সাইফুল ইসলামঃ আমাদের সরকারী গবেষণাগারগুলাতে কি ধরনের কাজ হয় সে বিষয়ে আমার কোনও ভালো জ্ঞান নেই| তবে অনেকের কাছ থেকে যেটা জেনেছি তা হলো এগুলাতে তেমন ভালো কোনও কাজ হয় না কিংবা ভালো কাজের সুযোগ কম| বেতনসহ অনন্য সুযোগ-সুবিধা কম বলে অনেকে বেসরকারি কোম্পানিতে চলে যায় বলে আমার ধারণা| অনেকে আবার উচ্চ-শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে চলে যায়|দেশের বাইরে উনারা যেসব কাজ করেন তা আমাদের দেশের জন্য ফলপ্রসূ না| যার ফলে উনারা দেশে ফিরে আসলেও আমরা উপকৃত হই না| আমার মতে সরকার সহ প্রাইভেট উদ্যোক্তাগণ আমাদের দেশীয় সমস্যা নিয়া ওনাদেরকে তৈরি করলে আমরা উপকৃত হতে পারি|


সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ:
আমাদের সরকারী বিজ্ঞান গবেষণাগার গুলির অবদান সাধারণ মানুষের কাছে ভিজিবল না। তাই অনেক কেই বলতে শোনা যায়, এসব গবেষণাগারের পিছনে টাকা খরচ না করে এগুলি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এই নিয়া সরকারের কি করনীয়, গবেষণাগার গুলির ই বা কি করনীয় বলে আপনি মনে করেন ?


ড. সাইফুল ইসলামঃ
সাধারণ মানুষের কাছে দেশের অনেক কিছুই ভিজিবল না| অনেকেই না জেনে অনেক সময় অনেক রকম মন্তব্য করে, বাস্তবের সাথে যার কোনও মিল নেই| আমাদের সরকারী গবেষণাগারগুলিতে বাজেট তেমন নাই| ফিবছর তাদের কাছে আমরা কি পেতে পারি তার কোনও হিসাব কষা হয় না| সেইসাথে তাদেরকে কিভাবে কার্যকরী ভাবে আমাদের দেশীয় সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা যায় তার পরিকল্পনা করা হয় না|

সায়েন্টিফিক বাংলাদেশঃ আমাদের সরকার বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন কে কি যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে ? আপনার কি মনে হয়?

ড. সাইফুল ইসলামঃ আমাদের সরকার সবসময় দাবি করেন যে তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন| কিন্তু প্রায়ই পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে অনেক ফারাক থেকে যায়| সঠিক পরিকল্পনা এবং যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবলমাত্র সরকারের সদিচ্ছা প্রকাশ পেতে পারে, অন্যথা নয়|

সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ: মা নিজে থেকে দুধ না দিলে সন্তানের দায়িত্ব কান্না কাটি করা । সরকার যথাযথ গুরুত্ব না দিলে বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের উচিত এই নিয়া আওয়াজ তোলা । আমাদের বিজ্ঞানী সম্প্রদায় কি সেই কাজটি করছেন ?

ড. সাইফুল ইসলামঃ বিজ্ঞান সম্প্রদায়ের দায়িত্ব কান্নাকাটি করা অবশ্যই না| তাদের দায়িত্ব গবেষণা করা ও দেশীয় সমস্যার সমাধান করা| এ বেপারে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে| বিদেশ থেকে কোটি টাকার বিনিময়ে প্রযুক্তি কিনে আনলেই আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না|প্রযুক্তি এনে আমাদের প্রযুক্তিবিদদের তা জানার ও বুঝার ব্যবস্থা করতে হবে| যাতে করে পরবর্তী সমস্যার জন্য বিদেশিদের ধরনা না দিতে হয়|অনেক সময় আমাদের প্রযুক্তিবিদরা অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করে দেখিয়েছেন যে সরকারের এজন্য কোটি টাকা খরচ করে বিদেশী কোম্পানি নিয়োগ না দিলেও চলে|

সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ: বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের পক্ষে কথা বলার জন্য দেশের বিজ্ঞানীদের কোন সংগঠনটির দায়িত্ব সবচেয়ে বেশী বলে আপনি মনে করেন ? তারা কি তা করছেন বলে মনে করেন ?

ড. সাইফুল ইসলামঃ বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারকে বুঝানো যে আমাদের সমস্যা সমাধানের যথেষ্ট মেধা আমাদের আছে| সেইসাথে সরকার ও নীতিনির্ধারিকগণের উচিত হবে আমাদের মেধাকে কাজে লাগানো| আমার জানামতে সরকার এখন বিভিন্ন বিষয়ের উপর পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে থাকেন| উনাদের উচিত সরকারকে ওয়াকিবহাল করা আমাদের বিজ্ঞানীদের সামর্থ্যের কথা এবং সরকারকে এই বিষয়ে যথোপযুক্ত পরামর্শ দেয়া|বিজ্ঞানীদের একটি সংঘটন আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি| সেটি হলো বাংলাদেশ একাডেমী অব সাইন্সেস। এই সংঘটনটি সেইভাবে কার্যকর বলে আমি মনে করি না|

সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ: আপনার সময় ও মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

ড. সাইফুল ইসলামঃ সায়েন্টিফিক বাংলাদেশ কেও ধন্যবাদ প্রশ্নগুলিকে সামনে আনার জন্য এবং আমাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top