Scientific Bangladesh

উচ্চ শিক্ষার সঙ্কট ও সম্ভাবনা: প্রেক্ষিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক সমস্যার জালে জড়িত। উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে চাই পরিকল্পিত কর্মমুখী শিক্ষা ।

প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মো. হুমায়ুন কবির,
প্রোভাইস চ্যান্সেলর (মনোনীত)
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়,

কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক নতুন বিভাগ চালু করছে দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় । সম্প্রতি অনুমোদন ছাড়াই কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিভাগ খোলার চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়ার পর ইউজিসি তা নাকচ করে দিয়েছে।  কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগ থেকে দুই, তিন এমনকি চারটি বিভাগও খোলা হচ্ছে । অভিযোগ রয়েছে, কিছু শিক্ষকের দ্রুত চেয়ারম্যান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ এবং নতুন শিক্ষক নিয়োগের জন্য পদ সৃষ্টির মতো বিষয়গুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে এসব বিভাগ খোলার ক্ষেত্রে । কাউকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার জন্য কিংবা কয়েকজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য ব্যক্তিস্বার্থে এগুলো করা হচ্ছে । এসব বিভাগের সিলেবাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে একটি বিভাগই যথেষ্ট। যেসব বিষয়ে পাঠদানের জন্য একটি কোর্সই যথেষ্ট, সে বিষয়েও বিভাগ খোলা হয়েছে। চাকরির বাজারে চাহিদা নেই এমন বিভাগও খোলা হয়েছে । অপ্রয়োজনীয় বিভাগ খোলায় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না । এভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তথা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত ।

 

কর্মমুখী শিক্ষা কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রধান সহায়ক। তবে কর্মবাজারের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা তরুণদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অপ্রয়োজনীয় বিভাগ খোলায় উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যেও বেকারত্বের হার বাড়ছে ।

আমরা জানি বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এখানে প্রচুর পরিমাণ সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষা অর্জনে প্রত্যাশী। সেক্ষেত্রে সরকারি যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে তাতে এই বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীর পক্ষে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয় এবং আসন সংখ্যা এখনো অপ্রতুল।

আমরা সবাই জানি, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে ঠিকে থাকতে হলে আধুনিক ও যুগপোযোগি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। বর্তমান বিশ্বে চলছে চাহিদা ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং গোটা বিশ্বের শিল্পকারখানা, প্রযুক্তি তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। একজন শিক্ষার্থীকে যোগ্য নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকতে হলে দরকার সময়োপযোগী শিক্ষা। আধুনিক যুগের চাহিদা ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সাবজেক্ট চালু করা প্রয়োজন । কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বছরে মাত্র ২ টি নতুন সাবজেক্ট অনুমোদন দেওয়া হয় যা দক্ষ মানবশক্তি গঠনের পথে অন্তরায় । দেশীয়দক্ষ জনবল কম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন সেক্টরে ফরেইন ইঞ্জিনিয়ার, টেকনোলজিস্ট এবং এক্সপার্ট আনা হচ্ছে যার ফলে একটি বিরাট অংকের অর্থবিদেশে চলে যাচ্ছে ।

নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় পড়াশুনার জন্য যেত । কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সংখ্যা প্রায় শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে । সুতরাং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগের চাহিদাসম্পন্ন সাবজেক্ট অনুমোদন দেওয়া হলে দেশেই বিভিন্ন সেক্টরের দক্ষ মানবশক্তি তৈরি হবে ও বিপুল অর্থের সাশ্রয় হবে ।

বিশ্বায়নের এ যুগে তথ্যপ্রযুক্তির আকাশচুম্বী সফলতা, বিজ্ঞান, গবেষণা, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক প্রচার ও প্রসার সবকিছুর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অসংখ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত সফলতার সাথে অবদান রেখে আসছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উৎপাদন শিল্প কারখানা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞান ও গবেষণা চর্চামূলক প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবলের চাহিদা পূরণের লক্ষে দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রায় সবকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য ।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও দেশ গঠনে সহায়তা করছে । একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তা সরকারি বা বেসরকারি যাই হোক না কেন, তার গবেষণার সুফল পুরো দেশ পেয়ে থাকে । কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যাপ্ত গবেষণা অনুদান ও ভর্তুকির অভাবে গবেষণার সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে । একই যাত্রায় দু’ফল কি একটি গণতান্ত্রিক সমাজে কাম্য? যেসব বিশ্ববিদ্যালয় দেশে ও বিদেশে সুনাম অর্জন করছে তাদের এমফিল ও পিএইচডি চালু করার সুযোগ দিলে দেশে উচ্চশিক্ষাগ্রহণ ও গবেষণার পথ সুগম হবে এবং কোর্স অনুমোদনের বিষয়গুলি এর পথে অন্তরায় হতে পারেনা ।

একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করা উচিত বলে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে জিডিপি’র ২% ব্যয় হয়ে থাকে।  অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যয় হয় জিডিপির ৩.৮ শতাংশ আর পাকিস্তানে ২.৬ শতাংশ। অর্থের হিসেবে ২০১৯-২০২০ বছরের বাজেটে যে টাকা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করা হয়েছে তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। দেশের ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সি বিপুল জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে হলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিষয়টি সরকার পুনর্বিবেচনা করবেন বলে আমরা সবাই আশাবাদী। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অজর্ন করেছে বিস্ময়কর সাফল্য । আমরা আশা করি শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা(SDGs) অর্জনের পথে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে ।  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয় অর্থাৎ কোর্স অনুমোদনের বিষয়গুলি যেন এতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তার জন্য মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে সদয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানাচ্ছি।

প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মো. হুমায়ুন কবির,

প্রোভাইস চ্যান্সেলর (মনোনীত)

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়,

১২-কামাল আতাতুরক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা, বাংলাদেশ।

ইমেইলঃ humaunka@gmail.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top