Scientific Bangladesh

কানাডায় বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ মোর্শেদ এর বিরল সন্মান লাভ

ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন
2017-07-16 14:14:59

সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর কানাডায় প্রায় দুই লক্ষ মানুষ মাইগ্রেট করে অভিবাসী হয়। উন্নত জীবন-যাপন আর সামাজিক নিরাপত্তার আশ্রয় পেতে বাংলাদেশ থেকেও অনেকেই পারি জমায় কানাডায়। সেখানেও আছে চিরাচরিত “স্থানীয় বনাম অভিবাসী” দ্বন্দ্ব-বৈষম্য। কানাডিয়ান অভিবাসীরা কানাডার অবিচ্ছেদ্য অংশ তা হাইলাইট করার লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছর “কানাডিয়ান ইমিগ্র্যান্ট” ম্যাগাজিন সেরা ২৫ কানাডিয়ান ইমিগ্রান্টকে পুরস্কার দিয়ে আসছে। এর মাধ্যমে নতুন অভিবাসীদের মাঝে তুলে ধরা হয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের সফলতার গল্প।

২০১৭ সালে সেরা ২৫ এ আছেন বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ মোর্শেদ। বর্তমানে তিনি ব্রিটিশ কলম্বিয়া সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ইন ভ্যানক্যুভার এ জুনুটিক এন্ড ইমার্জিং প্যাথোজেন বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি অধ্যাপনা করছেন ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি এন্ড ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগে। ড. মোর্শেদ মূলত গবেষণা করেন প্রাণী থেকে মানুষে বিভিন্ন জীবাণুর মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগ বিস্তার কিভাবে কমানো যায় তা নিয়ে।। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিফিলিস, লাইম ডিজিজ। সম্প্রতি তিনি সিফিলিস এর জন্য দায়ী কিছু ব্যাকটেরিয়া পেনিসিলিন এন্টিবায়োটিক এর প্রতি সংবেদনশীল হওয়া সত্ত্বেও কেন মানবদেহ থেকে দূর করা যায় না তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছেন।

সফলতার শীর্ষে আসতে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া এই গুণী বিজ্ঞানীকে অনেক কঠিন পথ পারি দিতে হয়েছে। গবেষণার হাতেখড়ি বাংলাদেশে মাইক্রোবায়োলজি ফিল্ডের কিংবদন্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. খাজা মোহাম্মদ সুলতানুল আজিজ এর হাত ধরে, যিনি পরবর্তিতে আইসিডিডিআর,বি তে কাজ করেছেন ২০ বছর। এরই ধারাবাহিকতায় ড. মোর্শেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে মাস্টার্স করেন ১৯৭৬-৭৭ সালে এবং পরবর্তিতে জাপানের ইয়ামাগুচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন ১৯৯৪ সালে। তারপর উচ্চতর ট্রেনিং নেন টোকিও এবং ক্যালিফোর্নিয়ায়। ১৯৯৬ সালে অভিবাসী হয়ে সপরিবারে কানাডায় আসেন। কিন্তু নিজের যোগ্যতা দিয়ে মন মতো জব পাচ্ছিলেন না। ভরণপোষণের তাগিদে শেষ পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তানকে কানাডায় রেখেই ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে পারি জমান জাপানে। ড. মোর্শেদের কথায় সেই সময়টাই ছিলো সবচেয়ে কঠিন। সেই কঠিন সময়েও তিনি ভেঙ্গে না পড়ে বরং একাগ্রচিত্তে মনোনিবেশ করেন গবেষণায়। সিফিলিস আর লাইম ডিজিজ এর বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়েছেন। সারা বিশ্বে নিজের স্বকীয় অবস্থান গড়েছেন এইসব রোগের কার্যকরণ ব্যাখ্যায়। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কানাডায় পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছেন মনের মতো চাকুরী নিয়েই। ড. মোর্শেদের ভাষায় সফলতার পেছনে ছিল “নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ, সেই সাথে উচ্চারণ-ভঙ্গি( একসেন্ট) আর অন্যেরা কিভাবে নিচ্ছে এসবের চাপও ছিল শুরুর দিকে। সত্যি বলতে ২০ বছর পরও ভালো করার তাগিদ আর চাপ কমেনি একটুও”। এই অধ্যাপকের মতে সফল অভিবাসীদের মূল্যবান গুন হলো “দ্রুত খারাপ সময় পেছনে ফেলার ক্ষমতা”। কারণ অনেকগুলি না এর পরই আসে একটি হ্যাঁ।

এখন পর্যন্ত বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নালে ড. মোর্শেদের ৯০ টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের নামকরা সাইন্টিফিক কমিউনিটির (আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজিস্ট, কানাডিয়ান এসোসিয়েশন ফর ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজ ইত্যাদি) মেম্বার হিসেবে নিজের অর্জিত জ্ঞান অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বাঙ্গালী অভিবাসীসহ পুরো বাংলাদেশের গর্ব ড. মোর্শেদ। নিজ কর্মক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, সুদূর কানাডা থেকে বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল রিসার্চ কে এগিয়ে নিতে যুক্ত হয়েছেন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান “বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ” এর সাথে। বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল গবেষণা এগিয়ে যাবে ড. মুহাম্মদ মোর্শেদ এর মতো সফল বাঙ্গালীদের উদ্যোগে এই আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top