2016-07-15 11:44:46
রউফুল আলম
কিছু কিছু মানুষকে নিয়ে লিখতে গেলে ধাঁধায় পড়তে হয়। তাদের চরিত্রই মুগ্ধতায় ভরা এক গল্প। শব্দের বুননে সে গল্প লিখে আর কতটুকু প্রকাশ করা যায়। স্টিফান বুজম্যান তেমনই একজন। কাঁচা যৌবন তার। অথচ এইটুকু সময়ের মধ্যেই কী চমৎকার সব কীর্তি জ্বলজ্বল করছে। কুড়ি বছর বয়সে সম্প্রতি পিএইচডি শেষ করেছে এই তরুণ। বর্তমান সময়ে সে সুইডেনের সেলিব্রিটি মেধাবী তরুণ।
স্টিফান আমার ইউনিভার্সিটির (স্টকহোম ইউনিভার্সিটি) ছাত্র। তার সাথে যোগাযোগ করলাম। কথামত গিয়ে হাজির হলাম তার অফিসে। কফি হাতে শুরু হলো আমাদের আড্ডা। স্টিফান বুজম্যান(Stefan Buijsman) জন্মেছেন ১৯৯৫ সালে, নেদারল্যান্ডের লাইডেন শহরে। সে শহরই তার বেড়ে উঠা। শৈশব থেকেই ছিল গণিতের প্রতি তার অসম্ভব ভালোবাসা। স্কুলে থাকতেই তিনটি ক্লাস ডিঙ্গিয়েছে সে। মাত্র পনের বছর বয়সে শেষ করেছে হাইস্কুল তথা দ্বাদশ শ্রেণী। তারপর পড়াশুনা শুরু লাইডেন ইউনিভার্সিটিতে। নেদারল্যান্ডের খুব নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় সেটি।
কম্পিউটার সাইন্সে স্মাতক করতে শুরু করে স্টিফান। তবে একসময় তার ফিলজফি অব ম্যাথামেটিক্স ভালো লাগতে শুরু করে। ভালো লাগার সাথে সে আপোষ করেনি। স্নাতক করতে তার দরকার ছিলো ১৮০ ক্রেডিট কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই সে শেষ করে ৩২০ ক্রেডিট। ডিগ্রিটা কম্পিউটার সাইন্সে হলেও ফিলজফি অব ম্যাথামেটিক্সের ডিগ্রি সে নিজেই শেষ করেছে। তারপর দুই বছরের মার্স্টাস শেষ হয়ে যায় এক বছরে। আঠারো পেরুতেই তার লাইডেন ইউনিভার্সিটির পাট চুকে যায়। সেখান থেকে চলে আসেন সুইডেনের স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে। মাত্র দেড় বছরের মাথায় তার পিএইচডি থিসিস শেষ হয়। স্টিফান যখন থিসিস জমা দেয় তার বয়স তখন বিশ। এই পর্যন্ত পড়ে আপনি বিস্মিত হতেই পারেন। কারণ এ বিস্ময় লেগেছে সুইডিশ সমাজেও। সুইডেনের প্রায় সকল প্রচার মাধ্যমের সংবাদ হয়েছেন স্টিফান। তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে স্টকহোমে অবস্থিত ডাচ দূতাবাস। ভবিষ্যতে তার গবেষণার জন্য আর্থিক অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানই। অনেকেই মনে করেন সুইডেনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে পিএইচডি করা তরুণ সে।
ফ্রেগ (Gottlob Frege) তার খুব পছন্দের গণিতবিদ এবং দার্শনিক। তালিকায় আছে ডেভিড হিলবার্ট, বার্টান্ড রাসেল সহ বেশ কয়েকজন। তাদের প্রসঙ্গ আসে আলোচনায়। স্টিফানের স্বপ্ন অনেক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে গবেষণার সাথেই সংযুক্ত থাকার ইচ্ছে তার। সে স্বপ্নের পথে তেমন কোন বাঁধাও নেই আপতত। সফলাতাই সফলতার জন্ম দেয়ে—এ কথা তার অজানা নয়। এত কম বয়সে পিএইচডি শেষ করেছে বলে তার কোন বিস্ময়ও নেই। খুব দৃঢ়তার সাথে বললো, ‘আমি তো সবসময়ই খুব তাড়াতাড়ি সব শেষ করেছি। আমার কাছে এটা আকস্মিক কোন বিষয় না’।
সুইডেনে সাধারণত গড়ে ২৭-২৮ বছরের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা পিএইচডি শেষ করে। স্টিফান মনে করে তার এই অর্জন সমাজের তরুণদের আরো কম বয়সে পিএইচডি শেষ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। গবেষণায় ভালো করতে হলে অল্প বয়সেই একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করা গুরুত্বপূর্ণ বলে সে মনে করে।
আড্ডায় কথা হয় অন্যান্য বিষয়েও। বাঙলাদেশকে সে চেনে, তবে কখনো সেখানে বেড়ানো হয়নি। বললাম, তোমার কথা প্রকাশিত হবার পর যদি বেড়াতে যাও তাহলে খ্যাতির বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে! সে হেসে বললো, খ্যাতির বিড়ম্বনার সাথে যথারীতি সে পরিচিত। সম্প্রতি এক ম্যাগাজিনের কাভার ফটোর জন্য, তাকে দুই ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন ভাবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়েছে।
স্টিফানের সাথে দেড় ঘণ্টার আড্ডা ফুরিয়ে যায় খুবই দ্রুত। এমন স্বপ্নবাজ আলোকিত মানুষের সাথে গল্প করে ক্লান্তি আসে না। আড্ডা শেষে আমার হাতে তুলে দিলো তার থিসিসের একটি কপি। রসায়নের গবেষক হয় তার থিসিসের আদ্যোপান্ত বুঝবো না কিন্তু দারুণ স্মৃতি হয়ে থাকবে সে বই। স্টিফানের সাফল্যের কথা পড়ে ঈর্ষান্বিত হোক আমাদের তারুণ্য। মনে-প্রাণে এটুকুই চাই আপাতত।