Scientific Bangladesh

বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের কাজের পরিধি প্রসারিত হওয়া সময়ের দাবী

মোহাম্মদ রাশেদুর রহমান

2013-06-27 22:55:34

ঔষধশিল্প বাংলাদেশে একটি ক্রমবর্ধমান খাত এবং রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।  আমাদের দেশে ঔষধ প্রস্তুত এবং বিপণনে হাজার হাজার ফার্মাসিস্ট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে । একজন ফার্মাসিস্ট (ঔষধ প্রস্তুত ও ব্যবহার সম্পর্কে পারদর্শী), যিনি ঔষধবিদ্যা সম্পর্কে যেমন ভাল জ্ঞান রাখেন সাথে সাথে এর ব্যবহার কিভাবে করতে হয় সে বিষয়েও পথ নির্দেশনা দিয়ে থাকে ।

 

একজন ঔষধ প্রযুক্তিবিদ হিসেবে ফার্মাসিস্টদের কাজের পরিধি ব্যাপক । সে একদিকে নতুন ঔষধ উদ্ভাবন ও গবেষণা, ঔষধ তৈরি, ঔষধের গুণগত মান নির্ধারণ করে থাকে অন্যদিকে বিপণন, ঔষধের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং বণ্টন ব্যবস্থায় দায়িত্বের সাথে অংশগ্রহণ করে থাকে । এসব কিছুর বাইরে উন্নত বিশ্বে ফার্মাসিস্টদের কাজের অনন্য একটি ক্ষেত্র হচ্ছে ঔষধের দোকানে রিটেইল ফার্মাসিস্ট হিসবে কাজ করা ।  বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যা সাধারন অনেকের কাছে অকল্পনীয় ও ব্যক্তিগত আত্নমর্যাদায় ধাক্কা দেওয়ার মত একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় ।

 

আমাদের দেশে যে ধারাটি  প্রচলিত আছে তা হচ্ছে আধা শিক্ষিত বা শিক্ষিত (ঔষধ বিষয়ে ডিগ্রিধারী নয়) ব্যক্তির দ্বারা (লাইসেন্স বা লাইসেন্সবিহীন) রিটেইল ফার্মাসিস্টের কাজটি সম্পাদিত হয়ে থাকে । এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঔষধ যেখানে মানুষকে মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করবে সেখানে এই কাজটি যদি প্রশিক্ষণবিহীন কাউকে দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে তাহলে তা জন স্বাস্থ্যের জন্য কতটা হুমকিস্বরূপ তা সহজেই অনুমেয় ।

 

প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচুর ফার্মাসিস্ট বের হয়ে আসছে । এদের মেধাকে কাজে লাগানো দরকার । আমরা চাই ফার্মেসী থেকে পাশ করে একজন গ্র্যাজুয়েট এই পেশাকেই ধরে রাখবে । অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, যে পরিমাণ সনদধারী ফার্মাসিস্ট আছে সে পরিমাণ কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় নাই । সেক্ষেত্রে বড় বড় চেইন ঔষধের দোকানে একজন করে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে ।

 

বর্তমানে বাজারে বহু কোম্পানির ঔষধ আছে যা তদারকি ও মান যাচাই বাছাই করার সরকারি দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন পরিদপ্তরের উপর ন্যস্ত আছে । কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে  ঔষধের মান পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না । তাই সরকারের উচিত হবে পরিদপ্তরের লোকবল বাড়ানো যা এই শিল্পকে আরও বেশি শক্তিশালী ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে তুলতে পারবে ।

 

আমাদের দেশে হাসপাতালগুলোতে দ্বিতীয় গ্রেডের ফার্মাসিস্টরা কাজ করে থাকে । এক্ষেত্রে তাদের পাশাপাশি একজন প্রথম শ্রেণীর ফার্মাসিস্টকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও দ্বায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা যাবে ।

 

ঔষধ প্রস্তুতিতে কাঁচামাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় কাঁচামালের  প্রায় ৯৯ % বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে । তাই এদেশে কাঁচামাল উৎপাদনের এক অপার সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে। শুধু প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং গুণগত মান নিশ্চিত করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা । মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্প পার্ক স্থাপনের কাজ কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলছে । এই খাতকে সম্প্রসারিত করা হলে ফার্মাসিস্টদের কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে ।

 

বাংলাদেশ বর্তমানে ঔষধ উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চলেছে । দেশীয় কারখানাগুলো দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৯৭ % ঔষধের যোগান দিয়ে থাকে । এমতাবস্থায় ফার্মাসিস্টদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে । এর জন্য দরকার নতুন নতুন কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা ।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top