Scientific Bangladesh

গবেষণায় বিশ্ব ও বাংলাদেশ ভাবনা – মোজাহারুল ইসলাম

2013-07-11 01:57:13

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আজকের অবস্থান হচ্ছে গবেষণালব্ধ ফলাফল নিজের দেশের প্রয়োজনে কাজে লাগানোর ফলশ্রুতি। অথবা নিজ দেশের প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে নিজেদের গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

আর এই গবেষণার পেছনে আছে সরকারী-বেসরকারী প্রণোদনা। আছে একাডেমীক এবং কমার্শিয়াল পরিবেশের মধ্যে যোগসূত্র। আমাদের দেশে গবেষণায় আগ্রহীদের মাঝে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং আর্থিক অনুদানের অভাবকে দোষারোপ করা হয় (ব্যাপারটা আংশিক সত্য হলেও সম্পূর্ণ নয়)। আর তাই নিজের মেধা বিক্রির জন্য আমরা পাড়ি জমাই প্রবাসে। সেখানের সকল সুযোগ–সুবিধা নিয়ে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেই বিশ্বের সর্বশেষ গবেষণার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে। এই ক্ষেত্রে অনেকের সফলতা একদমই ফেলে দেবার মত নয়। আর তাদের তুলে এনে বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে মর্মে প্রচারনার প্রতিযোগিতায় নামে আমাদের গণমাধ্যমগুলো। আমরাও তাদের সাথে সুরগোল তুলি এবং নিজেরাও আনুপ্রানিত হই। কিন্তু সমস্যা হল এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে ফিরে আসে না বা আসতে চায় না। বরং বিদেশে কোন কোম্পানির R &D তে চাকরি করে (যাদের গবেষণার ইচ্ছে থাকে) অথবা সেদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে ওখানেই থেকে যায়। যারা ফিরে আসে তারা অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক /সরকারী বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ। একাডেমীর প্রমোশন বৈতরণী পার হওয়ার জন্য এদের সবাই নিজের আর্টিকেল পাবলিকেশান নিয়ে সচেতন থাকেন। এদের অনেকেরই বিশ্বের নামিদামি গবেষণা পত্রে আর্টিকেল থাকে। পাবলিকেশান হয়, প্রমোশন হয়, অধ্যাপক তৈরী হয়, কিন্তু আমাদের দেশের সমস্যা নিয়ে কাজ হয় না।

আশার কথা, এত কিছুর পরেও কিছুলোক আছে যারা বিদেশের সব সুযোগ- সুবিধা ছেড়ে দেশে আসেন। অনেকেই হতাশ হন, কিন্তু অনেকের প্রচেষ্টা আবার উল্লেখ করার মত। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন, গ্যাস মিটার, পাওয়ার মিটার, পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, পাটের জীনোম সিকুয়েন্সিংসহ আরও অনেক অর্জন আছে- এ সব কিছুই উল্লেখ করার মত অগ্রগতি। তেমনি কৃষিতেও আমাদের উন্নতি অনেকের জন্য মডেল।

আর আগামী দিনের সমৃদ্ধ দেশ গড়তে এইসব গবেষণাকে এগিয়ে নেয়া খুব জরুরী। এই কাজটি সহজ হতে পারে একাডেমীক এবং কমার্শিয়াল পরিবেশের মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টির মাধ্যমে। সরকারী তহবিল থেকে অর্থ না দিয়েও সরকারই হতে পারে এই ক্ষেত্রে মুল চালিকাশক্তি।

মজার ব্যাপার হল, উন্নত বিশ্বের প্রচন্ড প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সাথে তুলনা করে অনেকে হয়ত হতাশ হয়। ভাবে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস কি কাজে লাগবে বা আদ কোন কাজে লাগবে কিনা… তাদের উদ্দেশ্যে বলি… “অন্য এর দালান দেখে নিজের চালায় আগুন দিব??”।

তাই আসুন নিজেদের অবস্থান থেকে সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের প্রয়োজনে গবেষণা করি। পারস্পরিক সহযোগিতা আর তথ্য আদান প্রদানে মাধ্যমে নিজেদের কাজকে এগিয়ে নেই। আর এই কাজে ছাত্ররাই হতে পারে আমাদের জনবল। তারাই আমাদের প্রাণশক্তি।

গবেষণার এই প্রয়াস অব্যাহত থাকলে আজ থেকে ১০-১৫ বছর পরে আমাদের দেশেও নিজেদের গবেষণা লব্ধ ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তির শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে- এই রকম আশা করাটা একেবারে অলীক হবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top