Albatross পাখীর মৃতদেহ যার পাকস্থলি প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিপূর্ণ! |
প্লাস্টিক বোতল বা পলিথিন ব্যাগ অবহেলায় নিক্ষেপের সময় আমাদের মনে কি প্রশ্ন জাগে আমরা পরিবেশ দূষণের অপরাধ করছি? ব্যক্তিগত বিবেচনায় মনে হতে পারে একটি বোতল ফেলে কী আর অপরাধ করলাম! কিন্তু চিন্তা করুন, পৃথিবীর প্রায় সাত বিলিয়ন মানুষ যদি আমার মত চিন্তা করে তাহলে এর পরিণতি কী দাঁড়াতে পারে? আমরা যা কিছুই নিক্ষেপ করি না কেন, এ সমস্ত প্লাস্টিক সামগ্রীর শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে সমুদ্র। প্লাস্টিক আবর্জনার কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ মারাত্নকভাবে বিপন্ন হচ্ছে; সেখানের অসহায় প্রানীগুলো মৃত্যুবরণ করছে করুণভাবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সমুদ্রে বিচরণকারী কোন কোন পাখির পাকস্থলির ৮০% জায়গা প্লাস্টিক বর্জ্যে দখল করতে পারে বা করে থাকে! এগুলো হজম হয় না, যার ফলে আস্তে আস্তে পাখীগুলো না খেতে পেরে করুণভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। ছবিতে দেখুন একটি নিরপরাধ এলব্রেট্রস (Albatross) পাখীর মৃতদেহ যার পাকস্থলি প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিপূর্ণ।
প্লাস্টিক পঁচতে ১৫ থেকে ১০০০ বছর লাগতে পারে। সূর্যের আলোর মাধ্যমে সাধারণত প্লাস্টিক ব্যাগ বা সামগ্রী ভেঙ্গে ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হতে পারে। এ ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণাগুলো সমুদ্রে ভাসমান বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে এক একটা বিষাক্ত পিলে পরিণত হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে সমুদ্রের এই ক্ষুদ্র ভাসমান প্লাস্টিক কণাগুলো পরিবেশের তুলনায় ১০০০ গুনের বেশী বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ শোষণ করে থাকে। গবেষণা অনুযায়ী দেখা যায়, সমুদ্রে এক পাউন্ড প্লাঙ্কটনের (যেগুলো মাছসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্য) বিপরীতে ছয় পাউন্ড প্লাস্টিক বর্জ্য বিদ্যমান!
প্লাস্টিক বর্জ্যে বিপন্ন ঢাকার পরিবেশ
প্লাস্টিকে থ্যালেট (Phthalate যা Plasticizer হিসেবে পরিচিত) নামক কেমিক্যাল পদার্থ থাকে যা প্লাস্টিকের নমনীয়তায় সাহায্য করে। এই থ্যালেটগুলো প্লাস্টিক সামগ্রী থেকে খাদ্যে বা পানিতে মিশে (leaching) যায়। থ্যালেট সিন্থেটিক ইস্ট্রোজেন (মেয়েলী স্বভাবের জন্য দায়ী) হিসেবেও কাজ করে। থ্যালেটের কারণে প্রাণীর শরীরে হরমোনের ভারসম্য নষ্ট হয়ে প্রজননশীলতা হ্রাস বা লোপ পায়। সিন্থেটিক ইস্ট্রোজেন পুরুষ মাছ বা প্রাণীকে স্ত্রী মাছে বা প্রাণীতে রূপান্তরিত করতে পারে। এর ফলে কোন প্রজাতির সেক্সের অনুপাত (Sex ratio) বিনষ্ট হয়ে ঐ প্রজাতির মাছ বা সামুদ্রিক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটতে পারে। অত্যন্ত আশংকার বিষয় হচ্ছে যে এই ক্ষতিকর থ্যালেটের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক। প্যাকেজিং সামগ্রী থেকে শুরু করে ফার্মাসিউটিক্যাল, খেলনা, গাড়ির পার্টস, কসমেটিক্স, ডিটারজেন্ট, পেইন্ট, ইলেক্ট্রিক্যাল সামগ্রীসহ যত্রতত্রভাবে থ্যালেট ব্যবহার করা হচ্ছে। প্ল্যাস্টিক সামগ্রীতে বিসফেনল-এ (Bis-phenol-A) নামক অত্যন্ত ক্ষতিকর প্লাস্টিসাইজারও থাকে যা সিন্থেটিক ইস্ট্রোজেন হিসেবে কাজ করে। এটি ক্যান্সার-এর কারণ হতে পারে এবং প্রজনন ক্ষমতাও নষ্ট করে দিতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী জানা গেছে। সম্প্রতি কানাডার সরকার বিস-ফেনলের ব্যবহার ব্যান করেছে।
প্লাস্টিক বর্জ্য কচ্ছপ প্রজাতির জন্য হুমকি স্বরূপ
শুধুমাত্র প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী মারা যাচ্ছে। পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকে আছে সামুদ্রিক সিস্টেমের কারণে। খাদ্য ও অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে সমুদ্রগুলো পৃথিবীর প্রাণীকুলের অস্তিত্ব রক্ষা করে। আমাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ বিপন্ন হতে চলেছে। পরিবেশ দূষণের এই দায়ভার আমাদেরকেই বহন করতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে সামনে রেখে যারা প্রতিটি পদক্ষেপ নেন, তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক।