মু: মাহবুবুর রহমান
ম্যালেরিয়া যে একটি রোগের নাম সেটা আমরা সবাই জানি। তবে ম্যালেরিয়া একটি ইতালীয় শব্দ, যা এসেছে Mala-aria থেকে। যার অর্থ দূষিত বায়ু বা বাতাস। অ্যানোফিলিস জাতীয় স্ত্রী-মশা ম্যালেরিয়া জীবাণুর বাহক। আর ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে কুইনাইন-এর নাম আমরা প্রায় সবাই জানি।
ওষুধ থাকা সত্ত্বেও মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়ায় বছরে বিশ্বজুড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু এই রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এতদিন পর্যন্ত ছিল না। তবে কয়েক দশকের টানা গবেষণার পর আবিষ্কার হয়েছে প্রাণঘাতী ম্যালেরিয়ার টিকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বুধবার (৬ অক্টোবর ২০২১) ম্যালেরিয়ার একটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে। বিবিসি জানায়, একশ বছরেরও বেশি চেষ্টার পর এটি চিকিৎসাশাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ অর্জনের একটি।
বিশ্বের অন্যতম পুরনো এবং অন্যতম প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ ম্যালেরিয়া। আজ থেকে প্রায় ৫০ হাজার বছর, অনেকের মতে এক লাখ বছর আগে থেকে বিশ্বে ম্যালেরিয়া দেখা দিয়েছিলো। যা মূলত ১০ হাজার বছর আগে থেকে ব্যাপক আকার ধারণ করে কৃষিকাজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে। কারণ ঘন জঙ্গল বা গাছগাছালির সঙ্গে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। আর ম্যালেরিয়ার বাহক হলো মশা, মূলত অ্যানোফিলিস জাতীয় স্ত্রী-মশা।
মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগে প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ২৩ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়; আর যারা মারা যান তাদের প্রায় অর্ধেকই আফ্রিকার শিশু। এক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার নতুন টিকাটি প্রতিবছর আফ্রিকায় লাখো শিশুর জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবে বলে উল্লেখ করেছে ডব্লিউএইচও।
আফ্রিকার দেশ ঘানা, কেনিয়া ও মালাবিতে ২০১৯ সাল থেকে পরিচালিত একটি পাইলট কর্মসূচির ফলাফলের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচও ম্যালেরিয়া টিকাটির অনুমোদন দেয়। ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আফ্রিকার ওই তিন দেশে ২০ লাখের বেশি ডোজ ম্যালেরিয়ার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। টিকাটি ১৯৮৭ সালে প্রথম উদ্ভাবন করে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে)।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের তৈরি করা আরটিএস,এস নামের এই টিকা কেবল ম্যালেরিয়া নয়, যে কোনো পরজীবীঘটিত রোগের বিরুদ্ধে মানুষের তৈরি করা প্রথম কার্যকর টিকা। ম্যালেরিয়া রোগের মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম গোত্রের পরজীবী। এ রোগ মানুষের শরীরে পৌঁছায় মশার মাধ্যমে। আর ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ হলো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, সেইসঙ্গে মাথাব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
স্থানীয় সময় বুধবার (৬ অক্টোবর ২০২১) জেনেভায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যালেরিয়ার টিকা বা ভ্যাকসিনটি অনুমোদনের ঘোষণা দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক দিন।’
তেদরোস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়া গবেষক হিসেবে আমার কর্মজীবন শুরু করেছিলাম। আমি এই পুরনো ও ভয়ানক রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা আবিষ্কারের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সেই দিন, এটি একটি ঐতিহাসিক দিন।’’ তিনি আরো বলেন, শিশুদের জন্য ম্যালেরিয়া টিকার প্রতীক্ষা বহু দিনের। বিজ্ঞান, শিশু স্বাস্থ্য ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এটা যুগান্তকারী ঘটনা। এই টিকা প্রতিবছর লাখো মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।
মু: মাহবুবুর রহমান; নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক