Scientific Bangladesh

মানবদেহের আকার পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে জলবায়ু পরিবর্তন

সৌজন্যে: এপি

মু: মাহবুবুর রহমান

মানবদেহের গড় আকার গত কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন ঘটেছে। আর মানবদেহের আকারের এই পরিবর্তনের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে বলে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে। আবহাওয়া শীতল থাকলে মানুষ লম্বা হয় এবং বড় আকারের হয় মস্তিষ্ক। আর উষ্ণতা বাড়লে মানুষ খাটো হয় এবং ছোট হয়ে আসে মস্তিষ্কও। গত কয়েক লাখ বছর ধরে এমনটাই ঘটেছে বলে ঐ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গত ৮ ই জুলাই সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির তাবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই গবেষণা করেছেন। তাঁদের গবেষণাটি ‘নেচার কমিউনিকশনস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, আধুনিক মানুষ বা হোমোসেপিয়েনসের উদ্ভব হয়েছে যে ফ্যামিলি থেকে সেই হোমোজেনাস ফ্যামিলির ৩০০ ‘রও বেশি ফসিলের মস্তিষ্ক ও শরীরের আকারের মাপ সংগ্রহ করেছিলেন তারা। এসব তথ্যের সঙ্গে গত কয়েক মিলিয়ন বছরের পৃথিবীর আঞ্চলিক জলবায়ু পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওই ফসিলগুলো জীবিত অবস্থায় কোন জলবায়ুতে বসবাস করেছেন তা খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা।

গবেষকরা দেখেছেন, জলবায়ু বিশেষ করে তাপমাত্রা গত কয়েক মিলিয়ন বছরে মানুষের দেহের আকার পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে। তীব্র শীত ও রুক্ষ জলবায়ুর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে অপেক্ষাকৃত বড় শরীরের। অপর দিকে তুলনামূলক উষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে খর্বকায় আকৃতির সম্পর্ক রয়েছে।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভল্যুশনারি ইকোলজির অধ্যাপক আন্দ্রে মনিকা বলেন, ‘‘এই সম্পর্ক বহু প্রাণীর ক্ষেত্রেই পাওয়া গেছে; এমনকি সমসাময়িক মানুষের মধ্যেও। কিন্তু এখন আমরা জানতে পারছি যে, গত কয়েক মিলিয়ন বছরে মানুষের শরীরের আকার পরিবর্তনে এটাই অন্যতম চালিকাশক্তি।’’ তিনি আরো বলেন, মানুষ দীর্ঘদেহী হলে শীতল আবহাওয়া থেকে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যায়। মানুষ যত লম্বা হবে, তার শরীর তত কম বিস্তৃত হবে। ফলে মানবদেহ আরও দক্ষতার সাথে তাপ সংরক্ষণ করতে পারে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত তিন লাখ বছর আগে আফ্রিকায় ‘হোমোসেপিয়েনস’–এর উদ্ভব হয়। কিন্তু ‘হোমোজেনাস’–এর অস্তিত্ব ছিল আরও অনেক আগে। এই হোমোজেনাসের মধ্যে ‘নিয়ান্ডারথালস’, ‘হোমো হাবিলিস’ ও ‘হোমো ইরেকটাস’ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ বা হোমোসেপিয়েনসের মতো আগের প্রজাতিগুলোর তুলনায় হোমোসেপিয়েনসের মস্তিষ্ক ৫০ শতাংশ ভারী ও তিন গুণ বড়। যদিও কেন হোমোসেপিয়েনসদের মস্তিষ্কে এমন পার্থক্য, এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এ বিতর্কে নতুন করে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি।

মস্তিষ্কের আকারের ওপর পরিবেশগত তথা জলবায়ুর প্রভাব নিয়েও কাজ করেছেন ঐ গবেষকেরা। তাঁদের মতে, মস্তিষ্কের আকৃতি পরিবর্তনের পেছনে জলবায়ুর তেমন ভূমিকা নেই। মস্তিষ্কের আকারে অনেক ভিন্নতা রয়েছে, যা পরিবেশগত পরিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আন্দ্রে মনিকা বলেন, ‘‘মজার বিষয় হচ্ছে মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তন সম্পূর্ণরূপে তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কিত নয়। সুতরাং মানবদেহ এবং মস্তিষ্কের আকার পৃথক ভাবে বিবর্তিত হয়েছে।’’

মু: মাহবুবুর রহমান; নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top